মুনজের আহমদ চৌধুরী::
এবাদুর রহমান চৌধুরী। লিলিপুটের গড় বিবেকের উচ্চতার দেশে ছ'ফুট উচ্চতার মানুষটিকে দেশবাসী জানতেন একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিক হিসেবে। আশির দশকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক জনদূত সম্পাদক। একজন কবি। সিলেট বিভাগ আন্দোলনের অন্যতম রূপকার। কমলগঞ্জে সমাজপতিদের ছুড়ে মারা পাথরে খুন হওয়া উনিশ শতকের আলোচিত নুরজাহান হত্যা মামলার প্রধান কৌশলী এই অসাম্প্রদায়িক মানুষটি।
সুপ্রীম কোর্টের বরেন্য আইনজীবী হিসেবে বর্নাঢ্য ক্যারিয়ারও চাপা পড়ে গেছে রাজনীতির অর্জনে। চা শ্রমিকের লাখো রিজার্ভ ভোটে নৌকার দুর্গ বড়লেখা থেকে চার বার নৌকার বিরুদ্ধে লড়ে এমপি হবার রেকর্ড শুধু আপনারই। আশির দশকে মন্ত্রীর মর্যাদায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০১ এ মন্ত্রীসভায় নিজ যোগ্যতায় জায়গা করেছিলেন। ৬৯ এর গনঅভ্যুত্থানে ঢাকার রাজপথে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাকেঁ বাদ দিয়ে দিয়ে কখনো বৃহত্তর সিলেটের রাজনীতির ইতিহাস লেখা যাবে না। ব্যক্তি জীবনে যিনি একজন রুচিবান, সৎ ও নির্লোভ মানুষ। নন্দিত মার্জিত একজন বক্তা।
দল-মতের ঊর্ধ্বে বড়লেখা-জুড়ীবাসীর পরম শ্রদ্ধার জায়গাটুকু আপনার অবর্তমানে বহুকাল শুন্যই থাকবে। আপনি থাকবেন লাখো মানুষের অন্তরে ভালবাসায়। আপনার প্রতি এ ভালবাসা বড়লেখা-জুড়ীবাসীর একজন দ্যর্থহীন অভিভাবকের প্রতি, আবেগের,মমত্বের জায়গা থেকে। হাকালুকিপারে উন্নয়নের রাজনীতি, শিক্ষা বিস্তারে আপনার ঐকান্তিক প্রয়াস বহুকাল খুব সাধারণ মানুষের বুকের ঘরে ভালবাসার অক্ষরে লেখা রবে। সব মানুষ একটা সময় বিদায় নেন। কিন্তু, লাখো মানুষের অন্তরের ভালবাসার অশ্রুজয়ী বিদায়ের সৌভাগ্য খুব কম মানুষের হয়।
মানুষটা দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির বাইরে দাঁড়িয়ে ষাট বছর রাজনীতি করেছেন। কোনকালে তার বিরুদ্ধে কেউ দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে পারেনি। রাজনীতি করে সম্পদ কেবল বিক্রি করেছেন। শ্বশুরবাড়ি থেকে তাঁর স্ত্রীর পাওয়া মৌলভীবাজার শহরের সমশেরনগর রোডের বাসাটি ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় বিক্রি করতে হয় তাঁকে। আজ কিছুক্ষণ আগে ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে মৃত্যুর সময় চার সন্তানের জন্য নিজের থাকার ফ্লাটটি ছাড়া কোথাও কোনো সম্পদ রেখে যাননি। তাঁর চিকিৎসা চলত তার কন্যার চাকুরীর বেতনের টাকায়।
আল্লাহপাক আপনাকে জান্নাতবাসী করুন, আপনার চার কন্যাকে এই শোক কাটিয়ে উঠবার সামর্থ দিন। আব্বার পর আপনার মৃত্যুতে আজ আমি, আমরা আমাদের মাথার উপরে বেঁচে থাকা ছায়া, দ্ব্যর্থহীন অভিভাবককে হারিয়ে বড় রিক্ত। আমার মা বাবার বিয়ে থেকে আমার বিয়ে; আমাদের পরিবারের সবকিছুই তাঁর হাতে। আমৃত্যু আপনার ভালবাসার কাছে ঋণী থাকবো নানা।
জানাজার সময়সূচী: নানার প্রথম জানাজা আজ বাদ মাগরিব ঢাকার লালমাটিয়া সি ব্লক জামে মসজিদে, আগামীকাল সকালে ঢাকা থেকে নেবার পথে মৌলভীবাজার শহরে টাউন ঈদগাহে ( ঢাকা থেকে রওনা হওয়া সাপেক্ষে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা, সময় হাসান আহমেদ জাবেদ সমন্বয় করবেন) ও সকাল ১১ টায় বড়লেখায় পিসি স্কুল মাঠে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। বাদ জোহর গাংকুলে পারিবারিক গোরস্থানে মা বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন তিনি।
লেখক : সাংবাদিক
জুড়ীরসময়/মুনজের/সাইফ