বিশেষ প্রতিবেদক:
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে বাজার গ্রামাঞ্চল থেকে মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারি চালিত অবৈধ অটোরিক্সা। এর আগেও পুলিশকে মাসিক চাঁদা দিয়ে অটোরিক্সাগুলো চলাচল করতো। পরে বেশ কিছুদিন পুলিশকে চাঁদা দেওয়া বন্ধ থাকলেও জুড়ী থানার ওসি মোশাররফ হোসেন থানায় যোগদানের পর থেকে আবার মাসোহারা শুরু হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সাগুলোর আলাদা আলাদা সমিতি রয়েছে। সমিতির নেতারা পুলিশকে হাত করে মাসিক নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দেন। এজন্য গাড়িগুলো নির্ধিদ্বায় সড়কে চলাচল করে। তবে অটোরিক্সাগুলোর ইউনিয়ন কার্ড রয়েছে। যাতে তারা সড়কে চলাচল করতে পারে।
মহাসড়কে দূর্ঘটনা প্রতিরোধের হুমকি হয়ে উঠেছে এই বাহনটি। বাজার সহ আশেপাশের মহাসড়কেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই অটোরিক্সা গুলো। বেপরোয়া গতিতে এই বাহন চলার কারণে মুহূর্তেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। ঘটছে অঙ্গহানি থেকে শুরু করে প্রাণহানিও। গত রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বাছিরপুর এলাকায় পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ধামাই এলাকার রকিব আলী বালিম নামের এক মোটর সাইকেল আরোহী অটোরিক্সার ধাক্কায় আহত হন। পরে সোমবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
বেশ কয়েকজন অটোরিক্সা চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রত্যেক চালক সমিতিতে মাসে ১শত টাকা করে দেন। এই টাকা থেকে কমিটির নেতারা থানায় একটি অংশ দেন। ভবানীগঞ্জ বাজারে এরকম তিনটি সমিতি রয়েছে যারা নিয়মিত চাঁদা দেয়। বাছিরপুর অটোরিক্সা চালক সমিতির এক চালক বলেন, আমাদের সমিতিতে ১৬৫টি অটোরিক্সা রয়েছে। আমরা সপ্তাহে সমিতিতে ২০টাকা করে দেই। আর প্রতি মাসে থানায় দেবার জন্য ১শত টাকা দেই।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক অটোরিক্সা চালক বলেন, বর্তমান ওসি থানায় যোগদানের পর থেকে টাকা দিতে হয়। এর আগে তাকে টাকা দিতে হত না। এবং টাকা দেয়ার কোন নিয়ম ছিল না।
শফিক মিয়া নামের জুড়ীর এক অটোরিক্সা চালক বলেন, আমি কখনো সমিতিতে টাকা দেইনি। গাড়ির মালিক প্রতিমাসে সমিতিতে টাকা দেন।
ভবানীগঞ্জ বাজারের অটোরিক্সা চালক ফজলু মিয়া বলেন, আমরা প্রতিমাসে ১শত টাকা করে দেই। এবং ইউনিয়ন থেকে এক বছর মেয়াদি একটি কার্ড আনতে দিতে হয় ২শত টাকা করে।
ভবানীগঞ্জ বাজার রিক্সা মালিক সমিতির সভাপতি কাদির মিয়া বলেন, আমরা আমাদের সমিতি’র সকল অটোরিক্সা থেকে মাসে ১শত টাকা নেই। এই টাকার অধিকাংশ পুলিশকে দেই। আমার সমিতিতে প্রায় ৪০-৫০টি অটোরিক্সা রয়েছে।
তিনি বলেন, জুড়ীতে এরকম ৬টি সমিতি রয়েছে। সকল সমিতি মিলিয়ে বাজারে ৫-৬ শত অটোরিক্সা রয়েছে। তারাও প্রতি মাসে এভাবে থানায় টাকা দিয়ে থাকে। এবং প্রতিবছর আমরা অটোরিক্সা থেকে ইউনিয়ন কর দেই।
তারেকুল ইসলাম নামের এক পথচারী বলেন, অটোরিকশা গুলো রাস্তাঘাটে চলার পথে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনো কখনো দেখা যায় তারা রাস্তার মধ্যে ইউটার্ন নিচ্ছে। এজন্য বাজারের মধ্যে লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। আবার কখনো তাদের বেপরোয়া গতির ফলে পথচারীদের সাথে সংঘর্ষ ঘটে।
স্থানীয় সমাজকর্মী আশরাফুজ্জামান রিশাদ বলেন, অনুমোদন না থাকার পরও সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা। এগুলো যত্রতত্র পার্কিংয়ের ফলে প্রতিনিয়ত বাজারে লেগে থাকে যানজট। এজন্য বেগ পোহাতে হয় পথচারী সহ অন্যান্য যানবাহন গুলোকে। এইসব অটোরিক্সা চালকদের নেই কোন দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা। কখনো ডানে-বামে না তাকিয়ে নিচ্ছে ইউটার্ন ঘটছে দূর্ঘটনা, আবার কখনো বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হচ্ছে যাত্রীদের সাথে।
তিনি বলেন, বাজার পেরোলেই রিক্সাগুলো সর্বোচ্চ গতিতে চলাচল করে। মাঝে মধ্যে সামনে অন্য রিক্সা কিংবা ধীরগতিময় গাড়ি দেখলে প্রতিযোগিতা করার চেষ্টা করে। বছর দুয়েক আগে এই অটোরিক্সার ধাক্কায় প্রাণ হারান নির্মাণাধীন পলিটেকনিক কলেজের ঠিকাদার। এভাবে প্রায়ই ঘটছে অঙ্গহানির ঘটনা। তবুও লাগামহীনভাবে জুড়ীতে বাড়ছে অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার সংখ্যা। অনুমোদনহীন অটোরিক্সা বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরব ভূমিকা পালন করছে!।
এ বিষয়ে জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন জুড়ীরসময়কে বলেন, আমাকে কেউ মাসোহারা দেয়না। আমি কারও কাছ থেকে মাসোহারা নেই না। প্রতিবেদকের প্রশ্নের বিষয়ে তিনি বলেন, আপনি প্রমাণ করেন। আমি এরকম কিছু করি না।
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো: মনজুর রহমান জুড়ীরসময়কে বলেন, যদি এরকম কিছু হয়ে থাকে তাহলে আমরা দেখব।