মৃত্যু পথযাত্রীর সংলাপ



পিংকু চন্দ্র পাল:

নগরীর কোলাহল এখানে তেমন নেই,

রজনী গভীর।

হাসপাতালের বেডে বিনিদ্র রজনী,

কাটছে আমীর আলীর।

এসির বাতাসেও,

বিন্দু বিন্দু ঘাম কপালে তাহার।

সাথে কেউ নেই,

আছে ভৃত্য এক "গরীব" নামের।

আমীর আলী ডাকেন,

"ওরে গরীব, বাপ আমার"।

চেয়ারের উপরেও,

শরীরটা কেঁপে উঠলো গরীবের।

জ্বি হুজুর বলেন,

বান্দা এখানেই হাজির।

কয়টা বাজে?

দেখ দেখি দেয়ালের ঘড়িতে একবার।

তিনটে হুজুর, বাকি নেই

খুব বেশি রাত্রি শেষের।

বলতে পারিস? কত টাকা,

পড়ে আছে ব্যাংকে আমার।

হাসালেন হুজুর,

সে সাধ্য কি আছে?এই অধমের!

গুলশানে বাড়ি ক'টা?

ক'টা মিল হলো স্ত্রী-পুত্রের?

বারিধারা অফিসে কর্মী কত?

ক'জন আছে অফিসার?

সে তো আপনার আছে,

ভুরি ভুরি, ঢের ঢের।

বল দেখি অন্তিম কালে,

যখন সময় যাবার।

তুই ছাড়া কে আছে,

পাশে মোর মরণ শয্যার?

নীরব কেনরে?

কাঁপছে কেন ও দুটি অধর?

হুজুর- খোলে দেই জানালা?

আসুক,স্নিগ্ধ বাতাস বাহিরের।

কথা ঘোরাচ্ছিস না'রে?

বাহিরে কী ভীড় আছে জোনাকির?

এক ফালি চাঁদ কি আজও,

ছুঁয়েছে দুরের মিনার?

তা আছে খুব,

যেন অনিঃশেষ রুপ প্রকৃতির।

তাই বুঝি, আফসোস!

সেসব দেখবো না আর।

হুজুর চলুন বাহিরে,

নিয়ে আসি হুইল চেয়ার।

না'রে মৃত্যুর আগে,

যখন সময় চির প্রস্থানের।

তখন কেউ দেখে না এসব,

কিছুই ভালো লাগে না তার।

অল্প চিনি মিশিয়ে,

তবে- শরবত দেই আপেলের?

ব্যস্ত না হয়ে পাশে বসে থাক,

দুটি কথা বলি হৃদয়ের।

থেকে থেকে সব পড়িছে মনে,

যত ভুল আছে জীবনের।

জন্মেছিলাম গরীব ঘরে,

নুন আনতে পান্তা ফুরায় যার।

পড়ালেখা কিন্তু কম করিনি,

ছাত্র ছিলাম সায়েন্সের।

রেজাল্ট বেরুলে চাকরির তালাশে,

কেটে গেলো কয়েকটি বছর।

কিছু না পেয়ে শেষে,

হলাম প্রাইভেট মাষ্টার।

ভালোই ছিলাম আমি, শুধু-

ভাগ্যটা খারাপ ছিল আমার।

টিউশনি ছেড়ে তাই,

ধরলাম দু-নম্বরী কারবার।

লাভ তাতে ভালোই হলো,

জেলও খাটলাম কয়েকবার।

কারাগার তারে শোধরায় না,

বিবেক থাকে না যার।

অল্প সময়েই হলাম শীর্ষ ধনী,

আমি এই শহরের।

আত্মীয়দের দেখিনি,

খোঁজও নেইনি প্রতিবেশীর।

দরিদ্রজনে সাহায্যও করিনি,

শুধু দেখেছি কোনটা নিজের।

জন্মদিনে পুত্র চেয়েছে গাড়ি,

কন্যার চাই নেকলেস হীরার।

স্ত্রীর বায়না দেখতে যাবে,

চীনের মহাপ্রাচীর।

প্রতিদানে কী পেলেন?

কত সম্মান এই কর্মযজ্ঞের?

খোঁজ নেয়না কেউ এখন,

আপন কিংবা পর।

জানি একদিন যখন,

নিশ্বাস থেমে যাবে আমার।

টিভিতেও নিউজ হবে,

পত্রিকায় ফিচার এক পৃষ্ঠার।

কাঙালি ভোজ বড় করে হবে,

বিল পরিশোধ কোটি টাকার।

তাতে কী লাভ কিছু হবে,

হুজুর- আখেরে আপনার?

জীবনে যে দাতা নয়,

অর্থ অপচয়ে কী লাভ তার?

জানি কিছু হবে না, বিচারে-

দন্ড পাবো কঠিন খোদার।

হুজুর যদি অভয় দেন,

একটি কথা আছে বলবার।

হাসালি মোরে, মুমুর্ষেরে বলিতে কথা

কী ভয় তোর?

চলুন তবে, তুলি দুটি হাত

আপনার ও আমার।

কেঁদে কেঁদে মাফ চাই,

যত ভুল আছে দুজনার।

লোভ, হিংসা,ক্ষুদ্রতা বশে-

পাল্লা যত ভারি হোক পাপের।

ক্ষমা পেতে নিরাশ হতে নেই,

দয়াময় স্রষ্টার।

ওরে তবে চল,

ধর মোনাজাত ধর।

মাফ চাই, অশ্রু জলে-

লঘু হউক হৃদয় ভার।

লেখক: শিক্ষক, ফুলতলা বশির উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়।

জুড়ীরসময়/ডেস্ক/এএ