বিশেষ প্রতিবেদক::
জানা যায়, আবাসিক হোটেল ও রিসোর্টগুলোতে কোনো রুম খালি নেই। ১০ থেকে ১৫ দিন আগেই বুক হয়ে গেছে প্রায় প্রতিটি রুম। এ অবস্থায় পর্যটকদের আগে থেকে রুম বুকিং দেয়া না থাকলে বেড়াতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শ্রীমঙ্গলের ৭০টি হোটেল ও রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ তাদের সব রুম অগ্রিম বুকিং দিয়ে রেখেছে। শ্রীমঙ্গলের ৫ তারকা হোটেলসহ সাধারণ মানের হোটেলগুলোতেও কোথাও কোনো রুম খালি নেই।
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থা বলছে, হোটেল-মোটেলগুলো আগে থেকেই শতভাগ বুক হয়ে গেছে। পূর্বের পরিচিতজনরা নানা ভাবে ফোন দিয়ে রুম বুকডের চেষ্টা করছেন কিন্তু আমরা পারছিনা । শেষ সময়ে এসে অনেকেই কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে রুম নিতে আগ্রহী হলেও তারা বিমুখ হচ্ছেন। এখন পর্যটকরা প্রতিদিনই রুমের জন্য কল দিচ্ছেন। তারা অতিরিক্ত টাকা গুনতেও রাজি কিন্তু কোনো উপায় নেই।
সিলেট থেকে আসা পর্যটক কলেজ ছাত্র পলাশ বলেন, আমরা কলেজ থেকে এটা গ্রুপ এসেছি, সেখানে ৬৫ জনের এটা টিম। সাথে শিক্ষকরা আছেন। আমরা এখানে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত। খুবই ভালো লেগেছে সবার কাছে। কিছু সংস্কার করালে আবার আসবো। ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মামুন আহমেদ বলেন, আমরা অনেক আগে এ বন দেখার জন্য এসেছিলাম। শীল আসছে তাই পরিবার ও বাচ্চাদের নিয়ে এখন আবার আসলাম তাদের মাইন্ড রিফ্রেশ করার জন্য। আসলে এখানে আসলে অনেক কিছু দেখা বা জানা যায়। তবে এ শীতে সবচেয়ে ভালো লেগেছে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ট্যুর গাইড মো. আহাদ মিয়া বলেন, প্রতিদিন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা আসেন, আমরা তাদের নিয়ে ভেতরটা ঘুড়ে বেরাই। এ বনাঞ্চলে রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ ও ৬ প্রজাতির বানর আছে। এগুলো দেখতে হলে ভোর বেলা বা বিকেলের দিকে আসতে হবে।
লাউয়াছড়ার ট্যুর গাইড সাজু মারচিয়াং বলেন, সকাল থেকেই পর্যটকদের যে ভীড় তাতে রেকর্ড পর্যটকের দেখা মিলবে বলবে আমরা প্রত্যাশা করছি। লাউয়াছড়ায় ৩টা পায়ে হাটার রাস্তা আছে আদা ঘন্টা, ১ ঘন্টা ও ৩ ঘন্টা। যারা বন্যপ্রাণী দেখতে চানঁ তারা এই রাস্তা দিয়ে গেলে দেখতে পারবেন।
এসকেডি আমার বাড়ি রিসোর্টের এমডি সজল দাশ বলেন, আমার এখানে কোন রোম নেই। পরিচিত অনেকের রিকুয়েষ্ট ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে কিন্তু কিছু করার নেই। প্রথম প্রথম নিজে না পারলেও রিসোর্টে চেষ্টা করেছি এখন কোথাও খালি নেই। এমনটা সাধারণ ঈদের ছুটিতে হয় কিন্তু এবার ৩ দিনের ছুটি একসাথে পড়ায় মানুষ ঈদের মতই একটা বড় ছুটি পাচ্ছে যার কারণে সব রুম বুকড এবার রেকর্ড পর্যটক এসেছেন বলেই আমার ধারণা।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বন রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, শীত আসলেই পর্যটকের আগমন ঘটে মৌলভীবাজারে। ডিসেম্বর মাস আসলেই পর্যটন এলাকা দেখার জন্য সবার পছন্দের স্থান থাকে মৌলভীবাজার। যা অন্যান্য মাসের চেয়ে বেশী। কারণ, এ জেলায় রয়েছে ১০ থেকে ১৫টা পর্যটন স্পট। শীতে এসব স্পটগুলো ঘুরে দেখেন পর্যটকরা। তাছাড়া এই স্পটগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ‘লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান’। এই ডিসেম্বর মাসের ১লা ডিসেম্বর হইতে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাতীয় উদ্যানের ভিতরে প্রাপ্ত বয়স্ক পর্যটক ৮ হাজার ৭শত জন, ছাত্র পর্যটক ৩হাজার ১শত ৮৬ জন তাছাড়া বিভিন্ন বিদেশী পর্যটক ৬৮জন এ বনে প্রবেশ করে। এই ২২দিনে সরকারে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫লক্ষ ৯ হাজার ৪শত ২৪টাকা। ২৩ডিসেম্বর শুক্রবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬ হাজার টাকা। তবে অন্যান্য মাসের চেয়ে এ মাসে পর্যটকরা বেশী আসছে। তিনি আরোও বলেন, এখন শীত প্রায় শেষের দিকে পর্যটকরা আস্তে আস্তে কমতে থাকবে।
শ্রীমঙ্গল পর্যটনসেবা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান থাকায় যেকোনো ছুটি কিংবা উৎসবে অসংখ্য পর্যটকের আগমন ঘটে। মৌললভীবাজার জেলায় আগত পর্যটকদের বড় অংশ রাতযাপনের জন্য শ্রীমঙ্গলকে বেছে নেন। বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। এছাড়া আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলের ৯০ শতাংশ হোটেল-রিসোর্টে আগাম বুকিং হয়ে গেছে।
মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, পর্যটকদের হয়রানি কমাতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলার প্রতিটি পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, ট্যুরিজম বোর্ড এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। ট্যুরিস্টদের জন্য চমৎকার একটা পর্যটন স্পট আমরা উপহার দিতে পারি।
জুড়ীরসময়/নাঈম/হোসাইন