কুলাউড়ায় লোকালয়ে বানরের উপদ্রব, হতাশ কৃষকরা!

 

কুলাউড়ায় লোকালয়ে বানরের উপদ্রব, হতাশ কৃষকরা!

শুভ গোয়ালা::

ভালো নেই বন্যপ্রাণী বানর। দিন দিন বন উজাড় ও খাবারের অভাবে এখন লোকালয়ে দেখা যাচ্ছে বানর। ধানেরক্ষেত ও বসতবাড়ির ছাদে, সবজির মাঠে  প্রতিনিয়ত হানা দিচ্ছে বানর। 


সরেজমিনে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, হিংগাজিয়া চা-বাগানের ভিতর অবস্থিত ধান ক্ষেতে প্রায় অর্ধশতাধিক বানর দল বেধে খাবার খাচ্ছে আর উন্মাদ করছে। এদিকে ধান ক্ষেত বাঁচাতে সারাদিন পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। অনেকেই কাঁচা ধান কেটে ঘরে তুলেছেন বানরের উপদ্রব বাড়ায়৷ 


কৃষক উত্তম কুমার জানান, আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে চলে আসি ধান ক্ষেত পাহারা দিতে । প্রতিদিন এসেই বানরের সাথে যুদ্ধে নামতে হয় সেই যুদ্ধ চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। রাত্রে তারা ধান খেতে আসে না।  অনেক সময় শত শত বানরের দল আমাদের উপর চড়াও হয়ে যায়। বাড়ি থেকে দূরে জমি থাকার কারনে আমি প্রায় ১০০ শতাংশের জায়গায় ধান চাষ করতে পারিনা এই বানরের কারনে। পাশে রাবার বাগান থাকার কারনে সেখানে সহজেই আক্রমণ করতো।  আমার জমির পাশে আরও কয়েকজন ধান চাষবাদ ছেড়ে দিয়েছেন। আমি প্রায় ৪-৫ বছর ধরে ছেড়ে দিয়েছি সেই জমিতে চাষাবাদ। 


আরও কয়েকজন কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আগে এতো বানরের উপদ্রব ছিলোনা। এখন  দিন দিন বেড়েই চলছে। বানরদেরকে বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখিয়ে সরিয়ে দিতেই দিন পার হয়ে যায়। একটি বানরের দলকে সরাতেই আরও একটি শতশত বানরের দল আক্রমন করে। 


তারা আরও জানান, এখানে প্রায় ৫০ একর জায়গায় ধানের চাষ করা হয়। এভাবেই যদি আরও বানরের আক্রমণ বাড়তে থাকে তাহলে ধান চাষ করা সম্ভব হবে না। অনেকেই বানরের উপদ্রবের কারনে ধান ক্ষেত ছেড়ে দিয়েছেন। 


এছাড়াও আদমপুর এবং হিংগাজিয়া চা-বাগানের উপর লাইনে বসতবাড়িতে লাগানো শিম বিভিন্ন শাক-সবজি নষ্ট করে দিচ্ছে লোকালয়ে আসা বানররা। 


গৃহীনি কৌশিল্লা রানি জানান, আমার ঘরের চালের উপর লাগানো শিম।  বানরের কয়েবার হানায় শিমগাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও কয়েকদিন পর পর পেপে, পেয়ারা, জাম্বুরা নিয়ে যাচ্ছে বানর। 


তবে প্রতিনিয়তই লোকালয়ে এমন অভুক্ত বানর দেখা গেলেও তাদের উদ্ধার বা পুনরায় বনাঞ্চলে ফিরিয়ে নিতে স্থানীয় প্রশাসন তেমন কোন উদ্যোগ নজরে আসেনি বলে জানান এলাকাবাসীরা। স্থানীয় লোকজন বনাঞ্চলের বানরকে লোকালয়ে দেখতে পেরে ছোট বাচ্চারা খাবার দিচ্ছে কিন্তু তারা ভয়ে সেই খাবার নিচ্ছেনা। 


এই ব্যাপারে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এইবার বানরের উপদ্রব অনেক জায়গায় একটু বেশি দেখাব  যাচ্ছে। ধারনা করছি কুলাউড়ায় আগে থেকে বনের মান কমে যাবার কারণে তাদের খাবারের অভাব দেখা দিচ্ছে বলে এমনটা হচ্ছে। এছাড়া এবারের বন্যার কারনে অনান্য জায়গা থেকে বানর আসতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমি নিজে অথবা আমার একটি টিমকে পর্যবেক্ষণে পাঠাবো।


জুড়ীরসময়/শুভ/হোসাইন