উৎপাদন কমছে জুড়ীর সবুজ কমলার, উদ্ধিগ্ন চাষিরা

উৎপাদন কমছে জুড়ীর সবুজ কমলার, উদ্ধিগ্ন চাষিরা
খোর্শেদ আলম::

জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলার উঁচু নিচু পাহাড়ে আবাদ হয় সিলেটের বিখ্যাত সবুজ কমলার। মান ভালো স্বাদে ভরপুর সু-মিষ্ট রসালো এই কমলার সুনাম রয়েছে দেশে বিদেশে। দেশের বিভিন্ন যায়গা থেকে সুগন্ধি সবুজ এই কমলা সন্ধানে ছুটে আসেন বিভিন্ন লোকজন। সবার কাছে পরিচিত সিলেটের সবুজ কমলা।

কিন্তু আবাদ হয় মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার অন্তর্গত লাঠিটিলা, লালছড়া, রুপাছড়া, জড়িছড়া, হায়াছড়া, শুকনাছড়া, ডোমাবাড়ী, কচুরগুল  এলাকায়।



স্থানীয় কমলা চাষীদের অভিযোগ দিন দিন কমছে আমাদের কমলার উৎপাদন। তবে কেন? জানতে চাইলে তারা বলেন বর্তমান সময়ের দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির সাথে খাপ খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে জন্য কমলা চাষের মতো পেশায় সময় দিয়ে এখন আগের মতো জীবিকা চলে না। তীব্র খরা ও বিষাক্ত পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা কঠিন। এসব সমস্যার কথা বলেছেন লালছড়া এলাকার বিখ্যাত কমলা চাষি জয়নুল মিয়া।

তিনি বলেন, এবার তীব্র খরার কারণে এ বছর কমলার ফুল ঝরে যায়। এতে বিগত বছর থেকে কমলার উৎপাদন এ বছর অনেক কম হয়েছে। কৃষি দফতর সঠিক ভাবে সহায়তা করলে আগামীতে বাড়বে উৎপাদন।

দেশে লেবুজাতীয় ফসলের সংকট মোকাবেলা করতে ও বিদেশ থেকে আমদানি রোধ করতে অর্থাৎ কমলা উৎপাদনে দেশে স্থানীয় কৃষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে সঠিক মিয়ম পর্যাবেক্ষণ করে উৎপাদনে বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছে কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তর।



কমলা বাগানের মালিক কমলা চাষী জসিম উদ্দিন বলেন, যখন কমলা গাছে  ফুল আসে তখন কমলা গাছের খুব প্রয়োজন হয় পানির। এবার সময়মত বৃষ্টি না হওয়ায় এবং সেচ দিতে না পারার কমলার ফলনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কারণ মূল সমস্যা প্রকৃতিক খড়া। কোন ভাবে সময়মত সেচের ব্যবস্থা করতে পারলে ফলন ভালো হবে আমি আশাবাদী। প্রতি বছর কমলা বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা লাভবান হলেও এবছর কামলা চাষে যা খরচ হয়েছে তা উঠবে না। ফলে আমরা কমলা চাষিরা পড়েছি দ্বিধায়।

ঐ এলাকার কমলা হারবেস্টিং শ্রমিক দুদু মিয়া বলেন, আমাদের এলাকায় ছোট বড় বেশ কয়েকটি কমলার বাগান রয়েছে। আমি প্রায় ১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে কমলা সিজনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আমি আমার জীবিকা নির্বাহ করেছি। এ বছরের মত এত খারাপ ফলন আর দেখি নি।



হায়াছড়া এলাকার কমলা চাষী জামাল মিয়া বলেন, এবছর মৌসুমের শুরুতেই পানির অভাব দেখা দেয়। নির্দিষ্ট সময়ে বৃষ্টি হয় নি। ফলে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর কমলার ফলনে অর্ধেক কম। গাছে যখন কমলার মুকুল আসে, ফুল দেয় তখন সেচের খুব প্রয়োজন হয়। বড় বড় পাহাড় ওই সময় আমরা সেচ দিতে পারি না। সঠিক সময়ে সেচের অভাবে কমলা ঝরে পড়ে। এ বছরের ফলনে আমরা চাষীরা খুবই হতাশাগ্রস্ত।

উপজেলা কৃষি কর্মকতা জসিম উদ্দিন বলেন, জুড়ী উপজেলায় এবার ৯৬ হেক্টর কমলার আবাদ হয়েছে। এখানে মূলত খাসি ও নাগপুরি জাতের কমলার আবাদ। কিন্তু, কৃষি বিভাগের লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় নতুন করে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, সার ও  চারা প্রদান এবং স্প্রে মেশিন প্রদানের মাধ্যমে নতুন নতুন বাগান করা হচ্ছে। এখানে বারি-১ বারি-২ ও দার্জিলিং জাতের কমলার জাত গুলো এ প্রকল্পের মাধ্যমে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। আশা করছি এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ হওয়ার পাশাপাশি  কৃষকরা  আর্থিক ভাবে লাভবান হবে

জুড়ীরসময়/খোর্শেদ/হোসাইন