জুড়ীতে শাহাব উদ্দিন এমপিকে পেয়ে ক্ষোভ ঝাড়লেন আওয়ামীলীগ নেতারা

জুড়ীতে শাহাব উদ্দিন এমপিকে পেয়ে ক্ষোভ ঝাড়লেন আওয়ামীলীগ নেতারা


বিশেষ প্রতিবেদক::

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় আওয়ামী লীগের বর্ধিত কর্মী সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রী আলহাজ্ব শাহাব উদ্দিন এমপিকে পেয়ে  নিজেদের ক্ষোভ ঝাড়লেন আওয়ামীলীগ নেতারা।

শনিবার জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বর্ধিত কর্মী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধা ৬ টা থেকে  ১০ টা পর্যন্ত টানা ৪ ঘন্টা এ বর্ধিত সভা চলে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সাংসদ পরিবেশ, বন ও জলবায়ূ পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী আলহাজ্ব শাহাব উদ্দিন এমপি। উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাসুক মিয়ার সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ভাইস চেয়ারম্যান রিংকু রঞ্জন দাসের পরিচালনায় বর্ধিত কর্মী  সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ কমিটির সদস্য এস এম জাকির হোসাইন, জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান মাসুক আহমদ, সহ সভাপতি এডভোকেট আব্দুল খালিক প্রমুখ।
সভায় উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতারা তাদের বিভিন্ন সমস্যা, অভিযোগ তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।

পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জুবের হাসান জেবলু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খন্দকার মুশতাকের অনুসারীরা এখনও দলের মধ্যে সক্রিয়। জুড়ীতেও তাদের অনুসারী দলের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। তাদের কারনে বিগত ইউপি নির্বাচনে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। অতীতে রাজনীতির পরিচয় বিহীন মানুষকে জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে পদবী দেওয়া হয়েছে।

ফুলতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের  যুগ্ম আহবায়ক তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে রাজনীতি করি। অথচ বিএনপি জামায়াতের কারনে এখন তৃনমূলে মূখ দেখাতে পারি না। উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বিএনপির কথা ছাড়া চলেন না। কমিটিতে হাইব্রিডরা দখল করে আছেন। বিএনপি, জামায়াতের লোকদের আওয়ামী লীগে এনে পদায়ন করা হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক জেলা পরিষদ সদস্য বদরুল ইসলাম বলেন, আমাদের নিজেদের মধ্যে কাদাঁ ছুড়াছোড়ি বন্ধ করতে হবে। নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজ দলের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন। নেতাদের বিরুদ্ধে যত লেখালেখি করে ততটা যদি দলের উন্নয়ন কর্মকান্ডের পাশাপাশি বিএনপি জামায়াতের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে লেখতো তাহলে দলের কাজ হত।

উপজেলা আওয়ামী লীগের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম বলেন, মাঠ পর্যায়ে আমাদের কর্মী সংকট। কর্মীদের নিয়ে কোন সভা করা হয়না। কর্মী তৈরীর জন্য কোন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।

পূর্ব জুড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কাদির বলেন, অনেক প্রোগ্রামে বিএনপি জামাতের বা শেখ হাসিনার নির্দেশ অমান্যকারী লোকেরা মঞ্চে জায়গা দখল করে বসে থাকে। আওয়ামীলীগের নেতারা বসার জায়গা পায় না। এখন থেকে যদি এদের মঞ্চে দেখি তাহলে টেনে নামাবো।

উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন লেমন বলেন, বিগত ইউপি নির্বাচনের সময় প্রশাসনকে ম্যানেজ করার জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছিলো। সেই টাকা অনেকে ফেরত পেয়েছেন আবার অনেকে পাননি। মন্ত্রী মহোদয় সেই সময় আমাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন আমার বিষয়টা তিনি দেখবেন।  কিন্তু নির্বাচনের ১বছর হয়ে গেলেও আমাদের কোন খোজখবর রাখা হয়নি। আমরা অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে এলাকায় ঠিকে আছি।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি জাকির আহমদ কালা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তি নিয়ে দু:খ প্রকাশ করে বলেন, হঠাৎ করে কেন কমিটি ভেঙে দেওয়া হলো। ছাত্রলীগ কোন সমস্যা করে থাকলে সেটা আমরা তাদেরকে কারন দর্শানোর নোটিশ দিতে পারতাম। দ্রুত ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের অনুরোধ জানাই।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমদ বলেন, আগামী ২৯ শে ডিসেম্বর আমার ইউনিয়নের নির্বাচন। অতিথের ভুলত্রুটি ভুলে গিয়ে আগামী নির্বাচনে আমার পক্ষে কাজ করার অনুরোধ করছি।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ কমিটির সদস্য এস এম জাকির হোসাইন তার বক্তব্যে বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই আওয়ামীলীগের প্রাণ। বিভিন্ন সময় অনেক বড় বড় নেতারা বঙ্গবন্ধু কন্যার সাথে বেঈমানি করলেও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কখনো বেঈমানি করেনি। এজন্য তিনি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সবচেয়ে বেশী ভালোবাসেন। সরকারের উপকারভোগী অনেকে বিএনপি জামাতের সরকার বিরোধী আন্দোলনের পেছনে অর্থায়ন করছেন, তাদের খুজে বের করে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অনলাইনে পরনিন্দা বাদ দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরুন। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামীলীগকে কেউ হারাতে পারবে না।

সভার শেষ অংশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, আপনাদের সুখ দুঃখের  কথা আমি শুনেছি। আমি শোনার মানুষ। সমস্যায় পড়ে রাত ২ টার সময়ও আমার বাড়ীতে গেলে আমার বাড়ীর দরজা খোলা থাকে। আপনারা আপনাদের সুখ-দু:খের কথা বলে ফেলেছেন। এসব বললে দু;খ কমে যায়। এখন আর কারোও মনে দু:খ থাকবে না। সব বিভেদ ভুলে আগামী নির্বাচনে নৌকাকে জয়ী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে। এসময় আসন্ন উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফুলতলার নির্বাচনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় নৌকা প্রতিকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে বিজয়ী করতে হবে।

জুড়ীরসময়/বিএইচ/সাইফ