মৌলভীবাজার ১ - মনোনয়নে লড়াইটা হবে মূলত প্রবীণ-নবীনের

মৌলভীবাজার-১ - মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছাত্রলীগের জাকির


সালাহ উদ্দিন জসিম, জাগো নিউজ::

মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৩৫ নম্বর আসন মৌলভীবাজার-১। এখানে চারবারের এমপি বন ও পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন। পাশাপাশি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনও এই আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। মনোনয়নে লড়াইটা হবে মূলত প্রবীণ-নবীনের।

স্থানীয়রা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে আছেন প্রবীণ শাহাব উদ্দিন ও নবীন এস এম জাকির হোসাইন। প্রতিযোগিতা তাদের দুজনের মধ্যেই হবে। কারণ দুজনই এলাকায় লেগে আছেন।

জানা যায়, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত এমপি শাহাব উদ্দিন। এবার আবার তিনি মন্ত্রিত্বও পেয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে শান্ত ও সজ্জন বলে পরিচিত এই নেতা এখন এলাকায় সময় কম দেন। কিছু রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, অন্য উন্নয়ন কাজে ধীরগতি নির্বাচনী দৌড়ে কিছুটা পিছিয়ে দিতে পারে তাকে।

নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জুড়ী থেকে ফুলতলা ১০ কিলোমিটার রাস্তা দীর্ঘদিন যাবত খারাপ। ধীরে চলে সংস্কার কাজ। জুড়ী থেকে লাঠি টিলা যেতে ভবানীগঞ্জ বাজারের আশপাশে দুই কিলোমিটার রাস্তাও ভাঙাচোরা। এলাকাবাসী বলছেন, পাঁচ-ছয় বছর ধরে এভাবেই পড়ে আছে। বৃষ্টি হলে পানি জমে জনদুর্ভোর কারণ হয়।

এদিকে, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন এলাকামুখী। নিজের উপজেলা জুড়ীতে বেশ ভালো অবস্থান তৈরি হয়েছে তার। তবে বড়লেখায় বর্তমান এমপির বলয় শক্তিশালী। যেটি ভাঙতে তাকে বেশ খাঠখড় পোড়াতে হবে।

মনোনয়ন নিয়ে বন ও পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন  বলেন, ‘আমি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন চাইবো। এরই মধ্যে আমার প্রতিশ্রুতির ৮০ শতাংশ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। মনোনয়ন পেলে বাকি ২০ শতাংশ সম্পন্ন করবো।

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি মনোনয়ন চাইবো। আমার কাজ করার প্রবল ইচ্ছাশক্তি আছে। এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। যে কোনো সংগ্রাম-সংকটে সবার আগে তাৎক্ষণিকভাবে জীবন বাজি রেখে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর মতো সাহস ও মনোবল আছে। যা করোনার (কোভিড-১৯) সময়ে এবং অতিসম্প্রতি বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা সব ক্ষেত্রে এখন তরুণদের প্রাধান্য ও মূল্যায়ন করছেন। তাই বিশ্বাস করি আমার একমাত্র অভিভাবক একজন তরুণ হিসেবে আমাকে কাজ করার সুযোগ দেবেন।’

এই দুই নেতার বাইরে মনোনয়নের জন্য অন্য কারও নাম তেমন আলোচনায় নেই। তবে মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের অনেকে নেতৃত্বের পরিবর্তনের কথা বলেছেন। তাদের বক্তব্য, শাহাব উদ্দিন তো দল থেকে সবই পেয়েছেন। এখন বিকল্প তৈরির সময়।

পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জুবের হাসান জেবলু বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানকার নবীন ভোটার ও নেতাকর্মীরা প্রার্থীর পরিবর্তন চায়। যদিও প্রবীণরা সেটি চান না।

তিনি বলেন, পার্টি ক্ষমতায় থাকলে যা হয়, নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন কম হয়। মান অভিমান বাড়ে, দূরত্ব তৈরি হয়। আর রাস্তাঘাটের কাজ শুরু হয়, কিন্তু শেষ হয় না। ঠিকাদররা নানা অজুহাতে কাজ আটকে রাখে। আমাদের এখানে অন্তত ৫০ শতাংশ রাস্তা খারাপ। কিছু জায়গায় কাজ ধরছে, কিছুটা করে ফেলে রাখছে, যার কারণে দুর্ভোগটা বেশি।

জুড়ি উপজেলা যুবলীগের শিক্ষা ও পাঠাগার সম্পাদক ফয়সল মাহমুদ বলেন, সরকারি বরাদ্দে এমপি সাহেব নানা কাজ করছেন। কিন্তু জনগণের সঙ্গে তার দূরত্ব আছে। বিশেষ করে আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ওনার বিশাল গ্যাপ। আমরা যারা তরুণ প্রজন্ম আমরা নতুন মুখ চাই। দীর্ঘদিন উনি মন্ত্রী, হুইপ ও এমপি ছিলেন। ওনার তো আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। ওনার অবর্তমানে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমাদের তো নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। এজন্য আমরা যারা যুবলীগ-ছাত্রলীগ করি, তারা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন ভাইকে চাই। মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন সাহেবের অবর্তমানে উনি এখানে সম্ভাবনাময় নেতৃত্ব। তার সে অবস্থান ও যোগ্যতা আছে।

জুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক হুমায়ুন রশিদ রাজী বলেন, অতীতে যেমন কাজ হয়েছে, এখন সেটা হচ্ছে না। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে এলাকায় কাজ কম হচ্ছে। এমপি আগের মতো এখন এলাকায় আসেন না। দুই-তিন মাস পর আসেন, তাও শুক্র-শনিবার। স্থানীয় নেতাকর্মী ও দলের সঙ্গে তার দূরত্ব বাড়ছে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, মৌলভীবাজার-১ আসনে (বড়লেখা এবং জুড়ী উপজেলা) মোট ভোটার ২ লাখ ৬৫ হাজার ৮০৯। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৩৬ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৩ জন।

ভোটের বিশ্লেষণে দেখা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৮) আওয়ামী লীগের মো. শাহাব উদ্দিন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৪২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নাসির উদ্দিন মিঠু পান ৬৫ হাজার ৮৫৩ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৪) আওয়ামী লীগের শাহাব উদ্দিন ১ লাখ ৪ হাজার ২০ ভোট পান। জাতীয় পার্টির আহমেদ রিয়াজউদ্দিন পান ৯ হাজার ৬৪৯ ভোট।

৯ম সংসদ নির্বাচনে (২০০৮) আওয়ামী লীগের শাহাব উদ্দিন ১ লাখ ৬ হাজার ৫৭০ এবং বিএনপির এবাদুর রহমান চৌধুরী ৬৯ হাজার ৬১৯ ভোট পান।

৮ম সংসদ নির্বাচন (২০০১) বিএনপির এবাদুর রহমান চৌধুরী ৪৯ হাজার ২৮১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের শাহাব উদ্দিন পান ৪৭ হাজার ৫৩৯ ভোট।

৭ম সংসদ নির্বাচন (১৯৯৬) আওয়ামী লীগের শাহাব উদ্দিন ৩৩ হাজার ১৭৯ ও বিএনপির এবাদুর রহমান চৌধুরী পান ২০ হাজার ৪৭ ভোট।

৫ম সংসদ নির্বাচন (১৯৯১) জাতীয় পার্টির হয়ে এবাদুর রহমান চৌধুরী লাঙল প্রতীকে ২৭ হাজার ৯০০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের ইমান উদ্দিন আহমেদ পান ২৭ হাজার ৫৫৮ ভোট।

এখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবস্থান প্রায় কাছাকাছি। সুষ্ঠু ভোট হলে বেশ লড়াই হয়। তবে ফ্যাক্টর চা বাগানে শ্রমিকরা।

সৌজন্য: জাগো নিউজ

জুড়ীরসময়/ডেস্ক/সাইফ