বাঘ বাঘ বলে চিৎকার, গ্রামবাসী মারলো বিপন্ন প্রজাতির গন্ধগোকুল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের পাতিলাসাঙ্গন গ্রামে লোকালয়ে এসে প্রাণ হারালো একটি বিপন্ন প্রজাতির গন্ধগোকুল। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) দুপুরে পাতিলাসাঙ্গন এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।


প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে হঠাৎ গন্ধগোকুল প্রাণীটি দেখতে পায় এলাকার লোকজন। হঠাৎ বাঘ বাঘ বলে চিৎকার করে একালাকার মানুষ জড়ো হয়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে প্রাণীটিকে মেরে ফেলে। 


ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেন জুড়ীরসময়ের বড়লেখা প্রতিনিধি মাহমুদ হাসান। তিনি বলেন, লোকালয়ে এই প্রাণীকে (গন্ধগোকুল) সাধারণ মানুষ দেখতে পায়। পরে এটিকে বিপদজনক প্রাণী মনে করে আতংকিত হয়ে পড়ে। এরপর আশেপাশের কিছু মানুষ প্রাণীটিকে ঘেরাও করে ঝাঁটা, লাটি-সটা দিয়ে আঘাত করলে সাথে সাথেই প্রাণীটি ঘটনাস্থলে মারা যায়।



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণী গবেষক মুনতাসির আকাশ জুড়ীর সময়কে বলেন, এই প্রাণীর ইংরেজি নাম Common Palm Civet এবং বাংলা নাম গন্ধগোকুল বা এশীয় তাল খাটাশ। এরা ছোট আকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী। নাকের আগা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত ৯২-১১২ সেন্টিমিটার, এর মধ্যে লেজই ৪৪-৫৩ সেন্টিমিটার। ওজন আড়াই থেকে ৫ কেজি হয়ে থাকে।  


পোলাও চালের মতো গন্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে গন্ধগ্রন্থি থাকে। গন্ধগোকুলের গাট্টাগোট্টা দেহটি স্থূল ও রুক্ষ বাদামি-ধূসর বা ধূসর-কালো লোমে আবৃত। ওর লেজের নিচে একটি বিশেষ গ্রন্থি রয়েছে; যা দিয়ে সে অনেকটা পোলাওয়ের চালের মতো এক প্রকারের গন্ধ ছড়ায়। গন্ধগোকুলের ধূসর রঙের এই প্রাণীটির অন্ধকারে অন্য প্রাণীর গায়ের গন্ধ শুঁকে চিনতে পারার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। প্রায় পোলাও চালের মতো তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে থাকে। এক সময় এর শরীরের গন্ধ উৎপাদনকারী গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস সুগন্ধি তৈরিতে ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে কৃত্রিম বিকল্প সুগন্ধি তৈরি হয়।  


তিনি আরো বলেন, গন্ধগোকুল নিশাচর। খাটাশের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে এরাই মানুষের বেশি কাছাকাছি থাকে। দিনের বেলা বড় কোনো গাছের ভূমি সমান্তরাল ডালে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকে, লেজটি ঝুলে থাকে নিচের দিকে। মূলত ফলখেকো হলেও কীটপতঙ্গ, শামুক, ডিম-বাচ্চা-পাখি, ছোট প্রাণী, তাল-খেজুরের রসও খায়।  


গন্ধগোকুল খাদ্যের অভাবে মুরগি-কবুতর ও ফল চুরি করে। এরা ইঁদুর ও ফল-ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে কৃষকের উপকার করে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক।


জুড়ীরসময়/ডেস্ক /এবিডি