নয়নকে হারিয়ে শোকে পাথর পরিবার



নিজস্ব প্রতিবেদক:

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত কুলাউড়ার অলিউর রহমানের বাড়ি এখন শোকে স্তব্ধ। পরিবারের বড় ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা-বাবা। তার এই মৃত্যু কিছুতে মেনে নিতে পারছেন না ছোট ভাই-বোনসহ গ্রামের কেউই।

সোমবার (৬ জুন) অলিউরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অলিউরের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তার মা-বাবা। পরিবারের বড় ছেলেকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ তারা। স্বজনদের আহাজারিতেও আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।

অলিউর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের ফটিগুলী গ্রামের আশিক মিয়ার ছেলে। পরিবারের ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে অলিউর বড়। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হিসেবে প্রায় ৪ মাস আগে একই গ্রামের বাসিন্দা ঠিকাদার মামুন মিয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড বিএম কনটেইনার ডিপোতে শ্রমিকের কাজে যোগ দেয় সে।

নয়নের জন্মদাত্রী মায়ের কয়েকবছর আগে আরেক জায়গায় বিয়ে হয়ে যায়। এরপর বাবা আরেকটি বিয়ে করেন। নতুন মা ও বাবার সাথেই থাকতেন অলিউর রহমান নয়ন। ফটিগুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী ও কর্মধা উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে সে। এরপর সংসারের কারণে পড়ালেখা বাদ দিয়ে চাকুরিতে যায় নয়ন। মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা রুজি করতো। তাই দিয়ে সংসার চলতো।

জানা গেছে, শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রামের বিএম কনটেইনার ডিপোতে হঠাৎ আগুনের ঘটনা ঘটে। এ সময় ফেসবুকে লাইভে থেকে সবাইকে আগুনের খবর দিচ্ছিল অলিউর। হঠাৎ অনেক শব্দে বিস্ফোরণ হলে হাতের মোবাইল ছিটকে যায় অলিউরের। তারপর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল।

রবিবার স্বজনরা জানতে পারেন চট্টগ্রাম মেডিকেলে তার মরদেহ রয়েছে। খবর পেয়ে অলিউরের বাবাসহ নিকটাত্মীয়রা তার মরদেহ আনতে চট্টগ্রাম ছুটে যান।

সোমবার সকালে অলিউরের মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। তাকে এক নজর দেখার জন্য আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব ও এলাকার শত শত নারী-পুরুষ ভিড় করেন। পরে বেলা ২টায় জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

অলিউরের বাবা আশিক মিয়া কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ছেলেটা সর্বশেষ ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বাড়িতে আসে। কয়েকদিন ছুটি কাটিয়ে আবার কর্মস্থলে ফিরে যায়। অগ্নিকাণ্ডের দুই ঘন্টা আগে ছেলে ফোন করে জানায়, তার বোনের পড়ার খরচ হিসাবে এক হাজার টাকা পাঠিয়েছে। কে জানতো আমার ছেলে এভাবে চলে যাবে?

এলাকাবাসী জানান, ছেলেটা খুব নম্র ভদ্র স্বভাবের ছিল। তার এ অকাল মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছিনা। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সরকারের কাছে আহবান জানান তারা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী  জানান, সীতাকুণ্ডে নিহত অলিউরের পরিবারকে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও অলিউরের পাশে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থাকবে বলে জানান তিনি।

জুড়ীরসময়/খোর্শেদ/এএ