কালা পাহাড়ে বিভীষিকাময় ৬ ঘন্টা!

কালা পাহাড়ে বিভীষিকাময় ৬ ঘন্টা!


জাহিদুল ইসলাম জাহিদ::

সিলেট বিভাগের সর্বোচ্চ পাহাড় কালাপাহাড় (১০৯৪ফুট)। যার ভৌগোলিক নাম হারারগজ পাহাড় তবে স্থানীয়দের কাছে লংলা পাহাড় হিসেবে বেশি পরিচিত। আশপাশে রয়েছে ছোটবড় একাধিক পাহাড় যেখানে খাসিয়া উপজাতিরা বসবাস করে যা পুঞ্জি হিসেবে পরিচিত। পাহাড় ঘিরে তাদের জীবন ও জীবিকা। পাহাড়ের সর্বোচ্চ বিন্দু থেকে দেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি হাওরের নীল পানি দেখা যায়।
কালা পাহাড়ে বিভীষিকাময় ৬ ঘন্টা!



ঈদুল ফিতরের কয়েকদিন পর আমরা ১০ জনের টিম আজগরাবাগ বাগান থেকে যাত্রা শুরু করি। তবে মাঝপথ থেকে কুলাউড়া লর ২ জন ছিটকে পড়েন। একের পর এক প্রকৃতিক  রূপ যে কাউকে মুগ্ধ করবে। মাঝেমধ্যে  কয়েকটি বাঁশের দৃষ্টিনন্দন সাঁকো আপনার ভ্রমনে বাড়তি শিহরণ যোগাবে। তবে সামনে পথগুলো এতটা স্বাচ্ছন্দ্যের মোটেই নয়। আঁকাবাকা পাহাড়ি উঁচুনিচু  দুর্গম পথ খুব সাবধানে পাড়ি দিতে হয়। কখনো নিজের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে মাঝপথ থেকে ফিরে আসার কথা বারবার মাথায় আসবে তবে সৃষ্টির বিশালতা, স্বপ্ন জয়ের প্রবল স্প্রিহা ক্লান্ত দেহকে আঁকড়ে রাখবে মাটির সাথে। 
কালা পাহাড়ে বিভীষিকাময় ৬ ঘন্টা!
লেখক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ



কখনো কখনো হাতির আনমনে পথচলা বা পদচিহ্ন মনে অদ্ভুত শিহরন জাগায়। ভাগ্য সহায় থাকলে বিরল বন্য প্রাণীর দেখা মিলবে গহীন যাত্রায়। সাহস এবং শারিরীক ভারসাম্য রক্ষায় তৃতীয় পা হিসেবে একটি লাঠি বা যষ্টি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক। একজন গাইড-কে অনুসরণ করে পাহাড় জয়ের আকুলতায় নিঃশব্দে পথচলা।

ঘন্টাখানেক হাটার পর আকাশ যেন অভিমান করে বসলো। চারিদিক অন্ধকার হয়ে কাটা গায়ে নুনের ছিটার বদলে নামলো বৃষ্টির ছিটা।  ভাগ্য সুপ্রসন্নে পাশেই ছিল খাসিয়া পুঞ্জি। দৌড়ে গিয়ে আশ্রয় সেই সুযোগে নেয়া হলো ক্ষনিকের বিশ্রাম। বৃষ্টি থেমেগেলো আবারো দিনটি হেসে উঠলো। আমাদের মনে তখন  নতুন প্রাণের সঞ্চার। আবারো যাত্রা শুরু। 

কখনো কখনো পানির চুমুকে প্রাণ ফিরে পাওয়ার চেষ্টা, তবে পানির অপচয় চলবে না কারণ সেখানে প্রতিটি পানির ফোঁটা যেন অমূল্য। বৃষ্টির বাঁধা পিচ্ছিল পথ বেয়ে ঘন্টা তিন এক পর ক্লান্ত দেহ নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় আরোহণ। 

সু-উচ্চ চূড়া থেকে ধরণীকে দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলো। সৃষ্টির বিশালতা হৃদয়ে নাড়া দিলো। নিঃশব্দে খানিকটা সময় পেরিয়ে গেলো টেরই পাই নি।। অবশেষে সময় এবং স্মৃতিতে বেধে রাখতে চূড়ায় নিজেদের কে ক্যামেরাবন্দি করলাম।  তখন হৃদয়ে ছিল বাংলাদেশ আর হাতে লাল সবুজ। মনে হচ্ছিল আমি বা আমরাই বাংলাদেশ!
কালা পাহাড়ে বিভীষিকাময় ৬ ঘন্টা!



অবশেষে ক্ষনিকের তৃপ্তির বিশ্রাম। আর ঐদিকে দেখতে দেখতে ফুরিয়ে গেলো বেলা। এখন ফিরে আসার পালা। গাইডের পথচিহ্ন অনুসরণ করে পাহাড়ি আঁকাবাকা আঁটোসাঁটো সেঁতসেঁতে পথ বেয়ে ভিন্ন পথে যাত্রা বিন্দুতে ফিরে আসা। ঘন্টার পর ঘন্টা পায়ে হেটে ও দুর্গম পথ অতিক্রম করে নিজের প্রতি  বিশ্বাসটা যেন বেড়ে গেছে বহুগুণ।

দিনশেষে এ অদ্ভূত অনুভুতি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।

সময় সুযোগ হলে প্রবল ধৈর্য এবং সাবধানতার সাথে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন বাংলাদেশের উত্তরের সর্বোচ্চ পাহাড়  কালাপাহাড়ের চুড়ায়।

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায় অবস্থিত কালাপাহাড়। কুলাউড়া থেকে রবিরবাজার হয়ে আজগরাবাদ চা বাগান পয়েন্ট থেকে গাইডের সহায়তায় কালাপাহাড় ভ্রমণ করা যায়।

মনে রাখবেন:
পাহাড়ি পথে হাঁটার প্রস্তুতির জন্য মানসিকতার পাশাপাশি ট্রেকিং উপযোগী পোশাক এবং জুতা নিতে হবে। অবশ্যই এনার্জি ধরে রাখার ব্যাপারে খোয়াল রাখতে হবে। সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি, পাওয়ার ব্যাংক, গামছা, ক্যাপ, ছাতা, গ্লুকোজ, স্যালাইন ও এনার্জি ড্রিংক নিতে হবে।

জুড়ীরসময়/জহিদ/সাইফ