মৌলভীবাজারে চলছে বোরো ধান কাটার উৎসব




আশরাফ আলী:

ফসল তোলাকে কেন্দ্র করে বাংলা সনের সৃষ্টি। ক্যালেন্ডারের পাতা অনুযায়ী চলছে বৈশাখ মাস। বৈশাখ মাস আসলে কৃষকের বাড়িতে আনন্দের বন্যা আসে। নতুন ফসল তুলে গোলা ভরবে কৃষক। এই আশায় বুক বেঁধে থাকে তারা। 

ঋতু হিসেবে এটা গ্রীষ্মকাল। এই সময়ে গ্রামের কৃষক মাঠে ধান কাটতে থাকে। তাই বসে নেই মৌলভীবাজার জেলার কৃষকরাও। জেলার তিনটি হাওর হাকালুকি, কাউয়াদিঘী,  হাইল হাওরে পবিত্র রমজানে সোনার ফসল গোলায় তুলতে কাকডাকা ভোরে মাঠে যাচ্ছেন কৃষকরা। 

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবছর মৌলভীবাজার জেলায় বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৫৭৫৭০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১০০৫৫ হেক্টর, রাজনগরে ১৩৭৩০ হেক্টর, কুলাউড়ায় ৮২১৫ হেক্টর, জুড়ীতে ৫৮০০ হেক্টর, বড়লেখায় ৫০৪০ হেক্টর, কমলগঞ্জে ৪৫১০ হেক্টর ও শ্রীমঙ্গলে ১০২২০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ৫৬৩৪৫ হেক্টর জমি।

এবছর নতুন জাতের বীজ ব্রি ধান-৯২, ব্রি ধান-১০০ যেটিকে বঙ্গবন্ধু ধান হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। নতুন জাতের মধ্যে ব্রি ধান-৮৯ ভালো ফলন হয়েছে।  

জেলায় সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে ব্রি ধান-২৯। এছাড়াও চাষ হয়েছে ব্রি ধান-৫৮, ব্রি ধান-১৪, হাইব্রিড সহ বিভিন্ন জাতের ধান।

কৃষি বিভাগ বলছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায়  ব্রি ধান-২৯ এর পরিবর্তে ব্রি ধান-৮৯ ও ব্রি ধান-৯২ এবং  ব্রি ধান-২৮ এর পরিবর্তে  ব্রি ধান-৮৮ চাষ করা হবে।

তবে হাওরে ব্রি ধান-২৮ ছিটা দেখা দিয়েছে।  যার ফলে অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছিটার কারণে অনেক কৃষক ধান কাটতে চাচ্ছেন না। তারা বলেন, এই ধান কেটে শ্রমিকের টাকা দেয়া সম্ভব হবে না। একই কথা বলেন কাউয়াদিঘি হাওর ও হাইল হাওরের কৃষক মাহমুদুল হাসান, খায়রুল ইসলাম সহ কয়েকজন।



হাকালুকি হাওরের কৃষক আব্দুল হান্নান বলেন, তিনি এ বছর ৮ বিঘা জমি চাষ করেছেন। এরমধ্যে ২ বিঘা জমিতে ব্রি ধান-২৮  চাষ করেছিলেন। পুরো দুই বিঘা জমির ফসলে ছিটা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, কৃষি বিভাগ থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা পাননি। 

কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের কৃষক রিয়াজুর রহমান বলেন, কৃষি বিভাগ কাগুজে কলমে ফলন বাড়িয়ে দেখাতে ব্যস্ত। কৃষকের সমস্যাগুলো সমাধানে কোন কাজে আসেন না। এভাবে চললে তো হবে না। 

তবে কৃষি বিভাগ ছিটার বিষয়টি স্বীকার করলেও কৃষককে অসহযোগিতার বিষয়টি অস্বীকার করে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় ৪১৮০০ কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৩৫ হাজার কৃষককে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ হাজার কৃষককে হাইব্রিড বীজ ও ৭৫০০ কৃষককে উচ্চ ফলনশীল বীজ দেওয়া হয়। এবং অন্যান্য ৬৮০০ কৃষককে বিভিন্ন কৃষি উপকরণ দেওয়া হয়।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজি লুৎফুল বারী জানান, বোরো ধান হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ। এতে রোগ বালাই থাকে। শিলা বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। এবং প্লাবনের আশংকা থাকে। 

তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বোরো ধান হাওরে কাটার উপযোগী হওয়ার পরও কাটা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে কৃষকরা বলছেন রোজা মাস থাকা ও শ্রমিক সংকটের কথা। এগুলো শঙ্কা তৈরি করছে। তবে সবমিলিয়ে বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। 

জুড়ীরসময়/ডেস্ক/এএ