জুড়ী লাঠিটিলা সাফারি পার্ক: ২০৩ কোটি টাকার প্রাণী ক্রয়ের পরিকল্পনা

জুড়ী লাঠিটিলা সাফারি পার্ক: ২০৩ কোটি টাকার প্রাণী কেনার পরিকল্পনা


নিজস্ব প্রতিবেদক:: 

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলায় প্রস্তাবিত দেশের তৃতীয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ২০৩ কোটি টাকার প্রাণী কেনার পরিকল্পনা করেছে সরকার। মোট ৯৮০ কোটি  টাকার সম্ভাব্য ব্যয়ে এ সাফারী পার্কের পরিকল্পনা ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করেছে সরকার। 

সূত্রে জানা যায়,  এ সাফারী পার্কে ৩৫ থেকে ৩৬ জাতের প্রাণী বিদেশ থেকে আনার পরিকল্পনা রয়েছে। বিদেশি প্রাণীগুলো মূলত আফ্রিকা থেকে আনা হবে। পার্কটিতে বন্য প্রাণী বাবদ ২০৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে  বন্য প্রাণী কেনা বাবদ রাখা হয়েছে ১৮২ কোটি টাকা। তবে বন বিভাগ ওই বরাদ্দ কমিয়ে বন্য প্রাণী কেনা বাবদ বরাদ্দ ১৪৬ কোটি রাখার প্রস্তাব করেছে। চলতি এ বছর বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৬ সালের মধ্যে এ সাফারি পার্ক নির্মাণকাজ শেষ করার মাস্টার প্ল্যান করা হয়েছে। 

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সাফারি পার্ক ছাড়া বাকি এলাকাগুলো থাকবে বন্যপ্রাণীর জন্য সংরক্ষিত, সেখানে কোন ভাবে বন্যপ্রানীদের সংরক্ষণে প্রতিবন্ধকতা করা যাবে না এবং বন বনের মতো থাকবে। সাফারি পার্কের ভিতর পশু পাখি শিকার বন্ধ ও গাছপালা সংরক্ষণ করার জন্য পাঁচটি পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প থাকবে। পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রক্ষী থাকবে। এখানে শিশুদের জন্য আলাদা পার্ক স্থাপনসহ শিশুদের খেলাধুলা ও শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য ব্যবস্থা থাকবে। বর্তমানে ২০৯ প্রজাতির প্রাণী এবং ৬০৩ ধরনের প্রজাতির উদ্ভিদ সম্পন্ন প্রস্তাবিত এলাকায় সাফারি পার্ক স্থাপিত হলে এখানে আরও অধিক প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর সম্মিলন ঘটানো হবে। লাঠিটিলায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৫ হাজার ৬৩১ একর বনভূমির উপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে ইকোভিলেজ, জঙ্গল সাফারি ও কোর সাফারি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। কোর সাফারি এলাকায় বাঘ, সিংহ, চিতা, হায়েনা, সরীসৃপ ও গন্ডার সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর জন্য সাফারি গড়ে তোলার প্রস্তাবনা আছে। 

বন বিভাগ সূত্রে আরও জানা যায়, প্রস্তাবিত সাফারি পার্ক এলাকায় বসবাসরত মানুষের ঐক্যমতের ভিত্তিতে মূলত এখানে সাফারি পার্ক নির্মিত হচ্ছে। এখানে সাফারি পার্ক স্থাপিত হলে বনভূমির অবৈধ দখল প্রবণতা স্থায়ীভাবে রোধ হবে। বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ও পরিবেশের মান উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। দেশের বিভিন্ন এলাকা ও বিদেশ থেকে আসা পর্যটকরা এ সাফারি পার্কে এসে বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি প্রাণীর সাথে পরিচিত হতে পারবে। এতে করে জুড়ী উপজেলায় পর্যটন ক্ষেত্রে দেশের মধ্যে অনন্য ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের বিরাট সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।

জুড়ী লাঠিটিলা সাফারি পার্ক: ২০৩ কোটি টাকার প্রাণী কেনার পরিকল্পনা
সাফারি পার্কের প্রস্তাবিত জায়গার একাংশ


বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক প্রকল্পের পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী জানান- মূলত প্রকৃতি, পরিবেশ ও বন্যপ্রানীদের সংরক্ষণ‌ করেই সাফারি পার্ক নির্মাণ করা হবে। এখানে যে সকল বন্যপ্রাণী আগে ছিল এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে এসব প্রাণীর প্রজনন বাঁড়বে। মূলত সাফারিপার্ক হচ্ছে বন্যপ্রাণীর জন্য নিরাপদ আভাসস্থল। 

এসময় তিনি আরোও বলেন, এ বন সম্পর্কে অনেকেই না জেনে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিচ্ছেন। বন বিভাগ বারবার যাচাই বাছাই ও গবেষণা করে মূলত লাঠিটিলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আর এ সাফারি পার্কটি বাস্তবায়িত হলে মূলত লাঠিটিলা বনাঞ্চল ভূমিদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পাবে এবং বন সংরক্ষিত থাকবে। 

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সম্ভাব্যতা যাচাই কমিটির টিম লিডার ডক্টর তপন কুমার দে মুঠোফোনে বলেন,  লাঠিটিলায়  সাফারি পার্ক নির্মাণ হলে বনভূমি দখলমুক্ত হবে এবং প্রাণীর সংখ্যা বাড়বে। 

প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরী বলেন, সম্ভাব্যতা যাচাই করে লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক নির্মাণ উপযুক্ত বলে মনে হয়েছে। এখানে মূলত বনভূমি রক্ষা করে সাফারি পার্ক নির্মাণ করা হবে। 

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এমপি বলেন, সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন অনুযায়ী অন্যান্য এলাকার চাইতে লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক স্থাপন অধিক সুবিধাজনক ও বাস্তবভিত্তিক। এলাকার মানুষের ঐক্যমতের ভিত্তিতেই জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলায় এ সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এখানে সাফারি পার্ক স্থাপিত হলে বনভূমি অবৈধ দখল হতে রক্ষা পাবে। জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের মানের উন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত পর্যটকগণ এ সাফারি পার্কে এসে বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি প্রাণীর সাথে পরিচিত হতে পারবে। মন্ত্রী আরোও বলেন, বর্তমানে সরকারি এ বনভূমির অভ্যন্তরে অবৈধভাবে বসবাসরত পরিবারগুলোর মধ্যে ৫৮ টি পরিবারকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। অবশিষ্ট পরিবারগুলোর সমন্বয়ে ইকোভিলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে। 

জুড়ীরসময়/ডেস্ক/সাইফ