আদালতে চার্জশিট গ্রহণ, বহিষ্কার হতে পারেন জুড়ীর আলোচিত উপজেলা চেয়ারম্যান!

আদালতে চার্জসিট গ্রহণ, বহিষ্কার হতে পারেন জুড়ীর আলোচিত উপজেলা চেয়ারম্যান!


বিশেষ প্রতিবেদক:: 

নানা কারণে বিতর্কিত মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার আলোচিত চেয়ারম্যান এম এ মোঈদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ বুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দিনবন্ধু পোল্ট্রি ফার্মে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটসহ  নানা অভিযোগের ঘটনার মামলায় অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে এই চার্জিসিট দিয়েছে পিবিআই। গত ২৯ তারিখ এই চার্জশিট দাখিল হলেও এখনো বহাল তবিহতে এই উপজেলা চেয়ারম্যান। এদিকে ২২ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চার্জশিটটি গ্রহন করেছেন।
 
উপজেলা পরিষদ বিধিমালা ১৯৯৮ এর আইনে ১৩খ। (১) এ বলা হয়েছে যেই ক্ষেত্রে কোন পরিষদের চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান বা মহিলা সদস্যের বিরুদ্ধে ধারা ১৩ অনুসারে অপসারণের জন্য কার্যক্রম আরম্ভ করা হইয়াছে অথবা উপযুক্ত আদালত কর্তৃক কোন ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র গৃহীত হইয়াছে সেই ক্ষেত্রে সরকারের বিবেচনায় উক্ত চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান বা মহিলা সদস্য বা অন্য কোন সদস্য কর্তৃক ক্ষমতা প্রয়োগ জনস্বার্থের পরিপন্থী হইলে, সরকার লিখিত আদেশের মাধ্যমে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, বা মহিলা সদস্য বা অন্য কোন সদস্যকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করিতে পারিবে।

পুলিশ বুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মৌলভীবাজার সুত্রে জানা যায়, গত বছরের ২ মে পোল্ট্রি ফার্মে ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগে জুড়ী থানায় মামলা দায়ের করেন ফার্মটির মালিক দ্বীনবন্ধু সেন। এরপর জেলা পুলিশ সুপারের চিঠির প্রেক্ষিতে সে বছরের ২০ জুলাই মামলাটি অধিগ্রহণ করে জেলা পিবিআই।
 
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. জামাল উদ্দিন জানান, আমরা দীর্ঘ ১ বছর তদন্ত করে বাদীর অভিযোগের সত্যতা পাই। আমরা প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে এ নিয়ে কথা বলেছি কিছু মালামালও উদ্ধ্বার করেছি। এর প্রেক্ষিতে উপজেলা চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামী করে আরও ১২ জনসহ সব আসামীর বিরুদ্ধে মৌলভীবাজার বিজ্ঞ আদালতে গত ২৯ তারিখ চার্জশিট দাখিল করেছি।

গত মাসের ২৯ তারিখ চার্জশিট দাখিল হওয়ার পরেও এখনো নিজ পদে বহাল তবিহতে আছে উপজেলা চেয়ারম্যান। দেখা গেছে জুড়ী উপজেলার মাসিক সভাসহ বিভিন্ন সরকারী অনুষ্ঠানেও । 

এ বিষয়ে জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানান জানান, এ সংক্রান্ত কোন কাগজ পত্র আমাদের হাতে এখনো আসেনি।

স্থানীয় সরকার বিভাগ মৌলভীবাজারের উপসচিব মল্লিকা দে জানান, এখনো আমার কাছে আসেনি। বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার পর উপজেলা পরিষদের আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)’র পুলিশ সুপার মো. আবু ইউসুফ, আমরা আমাদের তদন্তে যা পেয়েছি তা উল্লেখ করে প্রতিবেদন দিয়েছি। এখন বিজ্ঞ আদালত বিচার করবেন ।

এম এ মোঈদ গত বছরের ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। তিনি এই বিষয়ে বলেন , আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। রায় আমার বিপক্ষে না যাওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালনে কোন সমস্যা নাই।
 

উল্লেখ্য, গত বছরের ১ মে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম আমতৈল গ্রামে নিজের জমিতে ‘বন্ধু পোলট্রি ফার্ম’ নামে স্থানীয় বাসিন্দা দীনবন্ধু সেনের একটি মুরগির খামারে হামলার ঘটনা ঘটে । বছরখানেক ধরে ওই খামার নিয়ে এলাকার দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। স্থানীয় কিছু লোক খামারের দুর্গন্ধে এলাকায় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন। খামারমালিক পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, চাঁদা না দেওয়ায় স্থানীয় কিছু লোক তাঁর ব্যবসা বন্ধের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এ ব্যাপারে আদালতে মামলাও রয়েছে।

হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলার এজাহারে  বলা হয়েছে, প্রতিপক্ষের প্ররোচনায় উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোঈদ কয়েক জন সহযোগীকে নিয়ে ওই খামারে যান। তাঁদের হাতে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ছিল। একপর্যায়ে তাঁরা খামারে হামলা-ভাঙচুর চালান। এ সময় বাধা দিলে উপজেলা চেয়ারম্যান দীনবন্ধুকে পিস্তল দেখিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেন। একপর্যায়ে স্থানীয় ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহজাহান ভূঁইয়া গিয়ে বাধা দিলে চেয়ারম্যান ও তাঁর সহযোগীরা তাঁকে মারধর করেন। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এলাকার লোকজন হামলাকারীদের ধাওয়া করেন। এ সময় চেয়ারম্যান স্থানীয় একটি বাড়িতে ঢুকে পড়লে এলাকাবাসী সেখানে তাঁকে প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে পুলিশ পাহারায় উপজেলা চেয়ারম্যানকে তাঁর বাসায় পাঠানো হয়। আহত শাহজাহান মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ঘটনার পরদিন  রাত ১০টার দিকে দীনবন্ধু বাদী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোঈদসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। হামলা-ভাঙচুরে খামারের প্রায় নয় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

নানা ঘটনায় বিতর্কিত এই চেয়ারম্যান সম্প্রতি সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছেন। সম্প্রতি “জুড়ীতে বন ধ্বংস করে সাফারিপার্ক নির্মানের সংবাদ প্রকাশ করায়” দেশরূপান্তর, প্রথম আলোসহ যারা এই সংবাদ প্রকাশ করেছিল তাদেরকে দেশদ্রোহী এবং সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের বাড়ি ঘেরাওয়ের  হুমকি দিয়ে সারাদেশে আলোচিত হয়েছেন। এর আগেও বিভিন্ন বিতর্কিত কান্ডে আলোচিত হন তিনি। জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগের দিন রাতে স্থানীয় শিশুপার্কে নির্মিত মঞ্চের পাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত বিলবোর্ড ছিঁড়ে ফেলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া হল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকাকালে সেখানে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে  বলেন, মেজর ডালিম তাঁর পারিবারিক বন্ধু। ডালিম কখনো বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জড়িত থাকতে পারেন না। অথচ, ডালিম বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি  

জুড়ীরসময়/ডেস্ক/এস