ঐতিহাসিকভাবে আল-আকসা মুসলমানদেরই পবিত্র স্থান

 


মো. মেহেদী হাসান::

মসজিদুল আকসা ইসলামের তৃতীয় পবিএতম মসজিদ -যেটি জেরুজালেমের পুরোনো শহরে অবস্থিত। ইসলামি স্থাপনার প্রাচীন এই নমুনাটি মুসলমান,খ্রিস্টান ও ইহুদি- তিন ধর্মাবলম্বীদের কাছেই সমানভাবে পবিএ ওগুরুত্বপূর্ণ। ঈসাও মারিয়াম আলাইহিসসালাম এর সাথে প্রাচীনতম ইবাদতগৃহ মসজিদে আকসার সম্পর্ক সুনিবিড়ভাবে জড়িত।ইহুদিদের কাছে এটি 'টেম্পল মাউন্ট 'নামে পরিচিত। আল আকসা হচ্ছে ইসলামের প্রথম কিবলা,মক্কা ওমদিনার পর তৃতীয় পবিএ স্থান। মসজিদুল আকসায় এক রাকাত নামাজ আদায় করলে ২৫০ রাকাতের সাওয়াব পাওয়া যায়। শেষ জামানার ঘটনাবলির কারণেও এ এলাকাটি খুবইগুরুত্বপূর্ণ।এই এরিয়াতে দাজ্জাল ও ঈসা আঃ এর আগমন ঘটবে।বিশ্বনবি সঃ মিরাজের রাতে মসজিদুল হারাম থেকে আল আকসা মসজিদে এসেছিলেন এবং এখান থেকেই তিনি ঊর্ধ্বাকাশের দিকে যাএা করেন।বিশ্বনবি সঃ মিরাজ গমনের প্রাক্কালে এই মসজিদে সকল নবি -রাসূলের ইমামতি করে নামাজ আদায় করেন।এতে তিনি ইমামুল আম্বিয়া অর্থাৎ সকল নবির ইমাম এবং 'সায়্যিদুল মুরসালিন'তথা সব রাসূলের নেতা হিসেবে স্বীকৃত হন।এ এলাকাটি অসংখ্য নবি -রাসূলের স্মৃতিবিজড়িত।এর আশে পাশে অনেক নবি রাসূলগনের কবর রয়েছে। আল আকসা মসজিদের গুরুত্বের আরো একটি বড়ো কারণ হলো -রাসূল সঃ এর নবুয়তপ্রাপ্তির পর থেকে টানা ১৪বছর পর্যন্ত আকসা মসজিদই ছিল মুসলিমদের কিবলা।মক্কায় যখন রাসূল সঃ নামাজ পড়তেন, তখন বায়তুল মুকাদ্দাস অভিমুখী হয়ে দাঁড়ালে ও কাবাকে তিনি সামনে রাখতেন। হিজরতের ১৬-১৭মাস পর মহান আল্লাহর নির্দেশে মুসলমানদেন কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে মক্কার দিকে স্হায়ীভাবে পরিবর্তন হয়।বিশুদ্ধমত অনুসারে -সর্বপ্রথম আদম আঃ মসজিদুল আকসার ভিওিপ্রস্তর স্হাপন করেন। ঈমাম কুরতুবির মতে,এই মসজিদটি প্রথম নির্মাণ করেন আদম আঃ এর কোনো এক সন্তান।ইবনে হাজার আসকালানি রহঃতিনি নূহ আঃএর সন্তানের কথাও উল্লেখ করেছেন। পরবর্তীতে এই মসজিদটি পূর্ণনিমার্ণ করছিলেন ইবরাহিম আঃএর সন্তান নবি ইসহাক আঃএবং পরিপূর্ণ করেছিলেন নবি সোলায়মান আঃ।বনি ইসরায়েলের ধার্মিক লোকজন এই বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসায় আল্লাহ তায়ালার উপাসনায় মগ্ন থাকত।ইতিহাসের সুদীর্ঘ পথ শেষে খলিফা উমর ইবনুল খাওাব রা এর আমলে জেরুজালেম বিজয় হলে বর্তমান মসজিদের স্হানে তিনি একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে খলিফা আব্দুল মালিকের যুগে মসজিদটি পূর্ণনির্মাণও সম্প্রসারিত হয়।৭৪৬ খ্রিস্টাব্দে ভুমিকম্পে মসজিদটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে আব্বাসিয় খলিফা আল মনসুর এটি পূর্ণনির্মাণ করেন।১০৩৩খ্রিঃআরেকবার ভুমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলে খলিফা আলি আজ জাহির পুনরায় নির্মাণ করেন। যা অদ্যবধি টিকে আছে।১০৯৯ খ্রিস্টাব্দ ক্রসেডাররা  জেরুজালেম দখল করার পর মসজিদুল আকসাকে একটি প্রাসাদ এবং মসজিদ প্রাঙ্গনে  অবস্থিত কুব্বাতুস -সাখরাকে গির্জা হিসেবে ব্যবহার করত।মুসলিম বীর সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবি জেরুজালেম পুনরায় জয় করার পর মসজিদ হিসেবে পুনরায় ব্যবহার শুরু হয়।ইসলামের  তৃতীয় বৃহওম ঐতিহাসিক এ মসজিদটির ওপর চলছে জায়োনিস্ট ইহুদিদের আগ্রাসন। অবৈধভাবে গড়ে উঠা রাষ্ট্র ইজরাইল ১৯৬৭ সালে মসজিদুল আকসা জবরদখল করে নেয়।এরপর থেকে সেখানকার মুসলিম জনগণ মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান এ মসজিদে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। ইজরায়েলের মুসলিম বাসিন্দা এবং পূর্ব জেরুজালেম বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা মসজিদুল আকসায় প্রবেশ ওনামাজ আদায় করতে পারে। এখন তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমরা মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাই,তিনি যেন আবার ও আমাদের কুদস বিজয়ের তাওফিক দেন এবং মসজিদুল আকসা পুনরুদ্ধার করার হিম্মত নসিব করেন। আমিন। 

 লেখক: শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম

জুড়ীরসময়/ডেস্ক/এবিডি