ইন্টারনেট অব থিংস

 

https://www.jurirsomoy.com/

আব্দুল্লাহ হিল কাফি::

ইন্টারনেট শব্দটা শুনলেই আমাদের চিন্তা-ধারায় ভেসে আসে এক বিশেষ প্রযুক্তির কথা।এটা মূলত এক প্রকার সংযোগ বা কানেকশন।এই সংযোগ হলো আমাদের কম্পিউটারের সাথে অন্য কম্পিউটারের সংযোগ।কিন্তু কী হবে যদি আমরা আমাদের আমাদের এই 

নেটওয়ার্কের বাইরে বের হয়ে এসে নতুন এক নেটওয়ার্ক তৈরী করতে পারি।যে নেটওয়ার্ক বিদ্যমান থাকবে  আমাদের বাসার সাধারণ যন্ত্রপাতির মাঝে।অর্থাৎ আমরা ইন্টারনেট বলতে যা বুঝি তা আসলে আমাদের কম্পিউটারের সংযুক্তি আর বর্তমান সময়ে প্রযুক্তিবিদরা সভ্যতার উন্নয়নে নতুন এক প্রকার ইন্টারনেটের ধারণা সামনে নিয়ে এসেছেন।যেহেতু এই ইন্টারনেট বস্তুর সাথে বস্তুর এক প্রকার সংযুক্তি।তাই এই ইন্টারনেটকে প্রযুক্তিবিদগণ নাম দিয়েছেন ইন্টারনেট অব থিংকস অর্থাৎ জিনিসপত্রের ইন্টারনেট।ইন্টারনেট অব থিংকস পরিভাষার প্রচলন শুরু হয় ম্যাসাচুয়েট ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির আটো-আইটি সেন্টারের সহ প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক কেভিন আ্যশটনের মাধ্যমে।১৯৯৯ সালে পি এ্যান্ড জি কোম্পানির একটি প্রজেক্টে কাজ করার সময় কেভিন ইন্টারনেট অব থিংকস পরিভাষা ব্যবহার করেন।

https://www.jurirsomoy.com/


বস্তর নেটওয়ার্ক


এই বিশেষ প্রযুক্তি বুঝতে হলে আমাদেরকে বুঝতে হবে ইন্টারনেট কী এবং কেন।যেমনটা আগে বলেছি ইন্টারনেট হলো এমন এক প্রকার নেটওয়ার্ক যার মাধ্যমে দুটি কম্পিউটারকে সংযুক্ত করা যায়।এই কাজটা মূলত করা হয় তথ্য আদান-প্রদানের জন্য।এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম হচ্ছে এই নেটওয়ার্ক।অর্থাৎ একটি বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে তথ্য আদান-প্রদান করতে হলে আমাদের প্রয়োজন বস্তু দুটিকে একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যুক্ত করা।কিন্তু বস্তুগুলোর মধ্যে তথ‌্য আদান-প্রদান করে আমরা কী করবো?


আইওটি ও রবোটিক্স


প্রশ্নটার উত্তর রবোটিক্সের সাথে জড়িত।রোবট বলতে আমরা সাধারণত মানুষের মত দেখতে সয়ংক্রিয় যন্ত্রকে বুঝি।কিন্তু আসলে ধারণাটা সঠিক নয়।রবোট বলতে যেকোনো এমন যন্ত্রকে বোঝায় যা কারো নিয়ন্ত্রণ ছাড়া নিজে নিজে সয়ংক্রিয়ভাবে চলতে পারে।ইন্টারনেট অব থিংকস বা আইওটি এর মাধ্যমে আমরা চাচ্ছি আমাদের সকল জিনিসপত্রকে এক একটি রোবট বা সয়ংক্রিয় যন্ত্রে পরিণত করতে।মানে তুমি ঘরের দরজার সামনে দাড়ালে দরজা আপনা আপনি খুলে যাবে।তেমার কষ্ট করে খুলতে হবে না।তবে অন্য কেউ সামনে দাড়ালে খুলবে না।অর্থাৎ তোমার বাসার দরজাটা তোমাকে কিংবা তুমি যাদের ঘরে ডোকার অনুমতি দিয়েছো তাদের যদি চিনে এবং সে অনুযায়ী সয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে তাহলে তাকে আমরা একটি রবোটিক দরজা বলতে পারি।আইওটি প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা সকল যন্ত্রপাতিকে এরকম রোবটে পরিণত করতে চাচ্ছি।মানে ঘর অন্ধকার হলে সয়ংক্রিয়ভাবে বাতি জলবে।রুমের তাপমাত্রা বেশি হলে সয়ংক্রিয়ভাবে ফ্যান বা এসি চলবে।তোমার প্রয়োজন অনুযায়ী ঘরের সবকিছু নিজে নিজে কাজ করবে।তাহলে এখানে ইন্টারনেটের প্রয়োজন কী?ইন্টারনেটের মাধ্যমে যন্ত্রপাতিগুলো মূলত পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে।এখানে প্রতিটি যন্ত্র মূলত একটি ছোট কম্পিউটারের ন্যায় আচরণ করছে।একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা স্পষ্ট হবে।মনে করো,তুমি আজকে আফিস শেষে বাসায় আসবে ২ টার সময়।বাইরে প্রচন্ড গরম।তাই তোমার মোবাইল আগে থেকেই তোমার বাসার এসির সাথে যোগাযোগ করে বলে দিলো অন হয়ে যাওয়ার জন্য। তোমার এসি সময়মতো বাইরের আবহাওয়া ও তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করে তোমার জন্য আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করলো।এখানে তোমার এসি রোবটের মতো কাজ করেছে।আর এই রোবটটি তোমার মোবাইলের সাথে যোগাযোগ করেছে একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে।এই নেটওয়ার্ককেই আমরা বলছি ইন্টারনেট অব থিংকস।যার মাধ্যমে আমাদের প্রতিটি যন্ত্র আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে।


বাংলাদেশ ও আইওটি


ইন্টারনেট অব থিংকসে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও।উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের সরকরি-বেসরকারী নানা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে এই প্রযুক্তি নিয়ে।বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে আইওটির বিভিন্ন প্রকল্পসহ মিরপুরে আইওটি ল্যাব নির্মাণের জন্য অনুদান দিয়েছে।সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডাটা-সফট বাংলাদেশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আইওটি নিয়ে বড় ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সুইডেনের নেটওয়ার্ক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এরিকসন বাংলাদেশের জন্য ‘ইন্টারনেট অব থিংস’ নামের একটি পোর্টাল চালু করেছে।

ইন্টারনেট অব থিংকস মানবসভ্যতার অগ্রগতি ও উন্নতির পথে বড় সহায়ক এবং ভবিষ্যত বিশ্বের সোপানসরূপ।

লেখক: শিক্ষার্থীপি এইচ জি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় 

জুড়ীরসময়/এবিডি/ডেস্ক