লাঠিটিলার আয়রন ব্রিজে দু'দেশের সৌন্দর্য


সাইফুল্লাহ হাসান::

ব্রীজটির এপার বাংলাদেশ, ওপার ভারত। নিচ দিয়ে বহমান 'কাটা নালা' নামের ছোট্ট একটি নদী। এই নদীতে বিভক্ত ভারত - বাংলাদেশ। লতাপাতায় ঘেরা লোহার তৈরী এই ব্রীজটি ব্রিটিশ আমলের।  সেজন্য স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছেন ব্রিটিশ আয়রন ব্রীজ।

আকর্ষণীয় এই ব্রিজটি অবস্থিত মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী লাঠিটিলা এলাকায়।

ব্রিটিশ আয়রন ব্রিজটি দেখতে প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন এখানে।  দূর-দূরান্তের এ মানুষকগুলো দু'দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন প্রাণভরে। দেখা যায় সেখানে গিয়ে অনেকে স্মৃতিময় মুহূর্ত ধরে রাখতে নিজেকে ক্যামেরাবন্দি করে রাখছেন। 

জানা যায়, একসময় এই ব্রীজটি দিয়ে অবাধে যাতায়াত ছিল দু দেশের মানুষের। কিন্তু এখন সে অবস্থা আর নেই। কাঁটাতারের বেড়া বাধ হয়ে দাড়িয়েছে অবাধ যাতাযাতের।

লোকমুখে প্রচলিত, তৎকালীন ভারতের কোর্ট ছিল মৌলভীবাজার জেলায়। আর এই আয়রন ব্রীজটিই ছিল  যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। এই ব্রীজটি অবস্থিত ভারত ও বাংলাদেশর অভ্যন্তরে। ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার অন্তর্ভূক্ত ও বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলার ডুমাবাড়ি এলাকায়।

ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, তখনকার ইংরেজ শাসন আমলে এই ব্রীজটি তৈরি করা হয়। দেশ স্বাধীনের সময় এই ব্রীজটি ভারতের আসাম রাজ্যের সাথে বাংলাদেশের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম ছিল।  ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে ভারতের সৈন্যবাহিনী ব্রীজটি ধ্বংস করতে চেষ্টা করলেও পাকবাহিনীর দৃঢ়তায় তা ব্যর্থ হয়। কিন্তু পরবর্তীতে পাকিস্তানের সাথে ভারতের সুসম্পর্ক না থাকার ফলে ব্রীজটি ধীরে ধীরে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে এবং একসময় তা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। তবে আশ্চর্যজনক সত্য যে ব্রীজটি দীর্ঘ অবহেলা আর অযত্নে থাকার পরেও সে তার পুরোনো একটি জৌলুস নিয়ে দাড়িয়েছিলো।

কিন্তু ২০১৫ সালে নদীর তীব্র স্রোতে ব্রিজটির এক পাশ সম্পূর্ণরুপে কাত হয়ে ভেঙে যায়।

স্থানীয় শফিক উদ্দিন বলেন, গত কয়েকবছর  এখানে প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থীরা ঘুরতে আসেন। বেশিরভাগ দেখা যায় মোটরসাইকেল নিয়ে দলে দলে ঘুরতে আসছেন। এছাড়াও দূর দূরান্ত থেক গাড়িবহর নিয়ে পরিবারসহ আসেন অনেকে।

জুড়ীর স্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল 'জুড়ীর সময়ের' সম্পাদক আশরাফ আলী বলেন, এখানে আসলে দু'দেশের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। সীমান্ত কেন্দ্রিক এই স্থানটিকে যদি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়, তাহলে জেলার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান হবে এই জায়গাটি।

তিনি বলেন, কমলার জন্য সুপরিচিত লাঠিটিলা। পাশাপাশি যদি এই স্থানটিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজরে আনেন তাহলে কমলার পাশাপাশি আয়রন ব্রীজটির সুনাম ছড়িয়ে পড়বে দেশজুড়ে। 

স্থানীয় গোয়ালবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা ছোটবেলা শুনেছি আমাদের দাদারা এই ব্রীজটি দিয়ে করিমগঞ্জে গিয়ে পড়ালেখা করেছেন। এই এলাকাটির দিন দিন সৌন্দর্য বাড়ছে। ভারত বাংলাদেশের যৌথ যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে এই রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে।

জুড়ীরসময়/ডেস্ক/এস