জুড়ীর কমলা বাগানে চাপা পড়া ক্ষত!

জুড়ীর কমলা বাগানে চাপা পড়া ক্ষত! জুড়ীরসময়
সাইফুল্লাহ হাসান::

মৌলভীবাজারের সবচেয়ে বেশি কমলা চাষ হয় জুড়ী উপজেলায়। এই উপজেলার টিলা ও পাহাড়ি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কমলার চাষ। অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন এই কমলা বাগান করে।

কিন্তু সম্প্রতি সরেজমিন বাগানে ঘুরে চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কমলা বাগান আর ভালো নেই। দিন দিন বাগান কমতে শুরু করেছে। গাছগুলোও মরে যাচ্ছে। চাষিরা বলছেন কৃষি অফিসের পরামর্শ কাজে আসছে না তাদের। তাই তারা নতুন করে বাগান করতে আগ্রহী নয়।
 
উপজেলার সীমান্তবর্তী ডুমাবাড়ি এলাকার মকবুল আলী। ১০ বছর আগে ৩ একর জায়গায় ৪ শত ৬০ টি গাছ দিয়ে বাগান করেছিলেন তিনি। প্রতি বছরই ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা আসতো এই বাগান থেকে। বাগানের খরচ বাদে যে পরিমান টাকা থাকতো তা দিয়েই ভালোই চলছিলো সংসার। ৪ ছেলে, ৪ মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বাগানের মধ্যে ছোট্ট একটি বাড়িতে দিনযাপন করছিলেন। কিন্তু গত ৩ বছর থেকে বাগানের গাছগুলো মারা যাওয়ায় তার স্বপ্ন গুলো হারিয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিনে মকবুল আলীর এই ৩ একর জায়গায় গিয়ে দেখা যায়, এখানে যে বাগান ছিলো তার কোনো চিহ্নই নেই।

তিনি জানান, তার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিন বছর আগেও উপজেলার সেরা বাগানটি ছিলো তার। কৃষি কার্ড থাকলেও বিগত ৫ বছর থেকে সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না তিনি।
মকবুল আলী বলেন, বাগান করার পর ৫/৬ বছর ভালোই কমলা হইছিলো। এরপর থেকে দুইটা চারটা করে গাছ মরতে থাকে। মরতে মরতে হাতেগোনা ৩০ টির মতো গাছ রয়েছে। এগুলোতেও এখন আর পরিচর্যা না করায় ফসল আসে না। অনেকবার কৃষি অফিসাররা বাগানে আসলেও কোন কাজ হচ্ছে না, গাছগুলোকে আর রক্ষা করা যাচ্ছে না।

মকবুল আলী আরও বলেন, সরকার থেকে কোনো ধরনের সাহায্য পেলে আবার বাগান করার ইচ্ছা আছে।
পাতা হলুদ হয়ে ডালপালা মরে যায়, ধীরে ধীরে গাছটিতে আর ফসল আসে না। গাছ মারা যায় কয়েকদিনের মধ্যে। এমনই বলছিলেন ঐ এলাকার ৭০ বছর বয়সি চুনু মিয়া। তার বাগানেরও একই হাল।
চুনু মিয়া বলেন, এখন ১০০ টি গাছ রয়েছে আমার বাগানে। এবছর এই সব গাছে ফলই আসে নাই। দুই একটি আসলেও বানর, কাঠবিড়ালি, বিভিন্ন রকমের পাখি এগুলো খেয়ে ফেলেছে।

কমলা চাষি শফিক উদ্দিনের বাগানে রয়েছে ২ হাজার ২৯ টি গাছ। ৩ একর জায়গায় তিনি বাগান করেছেন। গত তিন বছর থেকে এ পর্যন্ত তার বাগানে ৪ শত গাছ মারা গিয়েছে।

শফিক উদ্দিন বলেন, কি কারনে গাছগুলো মারা যাচ্ছে তা বলতে পরছি না। যে গাছগুলোতে সবচেয়ে বেশি ফল আসতো সেই গাছগুলো বিশেষ করে মারা যাচ্ছে। কৃষি অফিসাররা এসে পরামর্শ দিলেও কাজে আসছে না। ধীরে ধীরে প্রত্যেকটি গাছে এই অজানা রোগ হানা দিচ্ছে।

গাছের মড়ক থামাতে না পারলে এই এলাকা থেকে কমলা চাষ বিলুপ্ত হয়ে যাবে এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় কমলা চাষিরা।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১৪২ হেক্টর জমিতে ১৯৩ টি কমলাবাগান আছে। সবচেয়ে বেশি ৯১ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হয় জুড়ী উপজেলায়। বড়লেখায় ২৫ হেক্টর, কুলাউড়ায় ১৭ হেক্টর, সদরে ১ দশমিক ৫, শ্রীমঙ্গলে ৬, কমলগঞ্জে ১ ও রাজনগরে ০ দশমিক ৫০ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হয়।
চাষিরা জানান, জুড়ীতে মূলত দুই ধরনের কমলার চাষ হয়- নাগপুরী ও খাসি জাত। এখানে খাসি কমলার চাষ বেশি হয়। নাগপুরী কমলাগুলো আকারে বড়, খাসি তুলনামূলক ছোট হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী বলেন, গাছ মরে যাওয়া সম্পূর্ণ দায় মেনেজমেন্টের। চাষিরা নিয়মিত পরিচর্যা করে না। এটি একটি ভাইরাস জনিত কারন। বর্ষার মৌসুমে গাছের গুড়িতে পানি এসে আয়রন ও অ্যালুমিনিয়াম জমে গাছটি ধীরে ধীরে মরে যায়।

তিনি বলেন, কিভাবে মারা যাওয়ার হাত থেকে গাছকে রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে চাষিদের অনেকবার ট্রেনিং দেয়া হয়েছে। 

জুড়ীরসময়/ডেস্ক